Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কোথাও অনেক দূর যেতে হবে || Jibanananda Das

কোথাও অনেক দূর যেতে হবে || Jibanananda Das

কোথাও অনেক দূর যেতে হবে
কিংবা খুব নিকটেই
তবু ব্যবধান যেন—এক জীবনের—
শানিত শীতের রাতে যাত্রা শুরু—কয়েকটা মরকুটে ঘোড়া ভাড়া ক’রে নিয়ে
তাহাদের প্রিয় নাম ধ’রে ডাকি মোরা—তবু কোনো সাড়া নেই
তবু তারা জানে সব;—ফোঁড়ার উপরে মাছির কামড় খেয়ে চেয়ে আছে
অতি দূর দিগন্তের রৌদ্র—ভনভন মৎস্য সব্জি বাজারের, মৃত, অধোমৃত
মিছিলের দিকে
ভাবে তারা: কেন এরা যেতে চায়
তাহাদের বিশ্রী—কুশ্রী নাক ফুলে ওঠে হৃদ্য বেদনায়
আমাদের গূঢ় অজ্ঞতায়
এই পথে মার্কো পোলো চলেছিল একদিন
তার আগে আত্তিলা—হুন—
কোথায় চলেছি মোরা শানিত নদীর রাতে—হাতে কোনো তরবারি নাই—
তীর্থ নাই
মাঝে মাঝে এক আধটু ভাঁড়ামির রস—ভৌতিক গেলাসের মতো
বধির আঁধারে পরস্পর বিনিময় করে—স্তব্ধ হয়ে চলিতেছি
সেই চিনে কনফুসিয়াস চলেছিল এই পথে একদিন
কি বা যায় আসে কে গিয়েছে—কে বা যেতে ভুলে গেছে
কি বা যায় আসে খ্রিস্ট বুদ্ধ জন্মে গেছে—অথবা গিয়েছে ভুলে জন্ম নিতে
আমাদের যেতে হবে—যেতে ভুলে যেতে হবে
আমাদের মৃত্যু পেতে হবে; আবার জন্মাতে হবে
জন্ম হবে জন্ম নিতে।
সূর্যপরিক্রমা কৃষ্ণকায় ক্রীতদাসী নিয়ে খেলা করে কোনো দূর মরুভূর পথে
রক্তাক্ত আঁচলে তার আমাদের শৈশবের মূঢ় হাসি দেখা দেবে আবার আর
এক দিন।
কিংবা তার সুবিলোল মেধে মোরা জন্মিব না আর
বুদবুদের মতো সময়ের সমুদ্রে ফুরায়ে।
নামের ওপারে নাম, পথের ওপারে পথ
যেন কোনো ত্রিকোণের পাশে এসে
গোলকধাঁধার থেকে নিজেরে বাঁচায়ে নিতে
নিজের নির্জন আলো এনেছিল যারা
তারা দীপ ধার দেয়
প্রতিবেশীদের স্নেহ করে
আমাদের তবু আলো নেই
অনেক নক্ষত্রভরা আকাশের চেয়ে কেউ কেরোসিন কুপি, জাপানি লণ্ঠন চায়
সমীচীন মনে করে
কেউ দূর ফসফোরেন্ট সমুদ্রের দ্যুতি
আমাদের চোখে এসে সকল হেঁয়ালি হয়ে যায়
আমাদের তবু আভা নেই।
স্থবির বয়সে মোরা কৃতী নগরীর পথ থেকে সহসা এসেছি নেমে
মরকুটে ঘোটকের পিঠে চ’ড়ে
পৃথিবীর দুর্মদ—ধূসর পথ দিয়ে যেতে কি যে সুখ?
বহুদিন গৃহিনীর সাথে পরিচয় হয়েছিল—তারপর হাটের সরাই
বহুদিন সন্ততিকে দেখিয়াছি, মানুষ হতেছে ক্রমে—
তারপর শিশু—দাস দিকে দিকে অখাদ্য খনির গর্ভে।
কোনো একদিন হন্তা কারে বলে—জানিয়াছি
জেনেছে উর্বশী—সেও কেন রূঢ় হয়ে অমৃতের স্থলে
অনৃতকে পেয়ে
তারপর যে—কে—সের তরে শানিত নদীর রাতে অবিরল
উল্কিপরা গণিকার ভিড়
অবিকল কড়ি আর পারানির কলরব—কলরব—
এইসব বালিকাকে—
তাহাদের শিশুকালে ফিরে পেলে—আমাদের জানুর উপরে—
ঊষালোকে আবার বসায়ে একে একে মুখ চিনে দেখিতাম সকলেরে চিনি তবু।
অমোঘ তিমির রাতে দুরারোহ শীত আজ—আমরাও অনেক স্থবির
আমাদের কেউ কেউ এইসব প্রত্যাসন্ন নগ্ন নারীদের বুকে
ভোটকম্বল ছুড়ে দিয়ে গেল—বিপন্ন শ্রদ্ধায়
আমরা স্থবির ঢের
কোনো সংহত দীপ নাই আমাদের
সকল অতীত পুড়ে গেছে
হাতের আয়ু—রেখা জ্বলে ওঠে নারীদের বড় গোল চাঁদের অনলে
আমরা চলেছি ওই—এই ভেবে: আমলকী চাই করতলে।
কতদিন কোনো এক ঐশীর নিকটে যেন
প্রার্থনার মানে ছিল
তারপর এরা সব: ঈর্ষা, যুদ্ধ, মারীর প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে
ক্যাম্প খোলে
আমরাও জানি—কোনো দ্বার নাই আর খুলিবার মতো
আলো অন্ধকার কৃশতারা খারকীর্ণ ছাড়া কিছু নাই আর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress