এক অন্য নারীর গল্প
আজ সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে । প্রকৃতির সাথে বিষাদ ঘিরেছে তমসার জীবনেও । সাত দিন কথা হয়নি রণির সাথে ।রণি হল তমসার দিদির দেওর । বছর দুয়েক হল বিয়ে হয়েছে দিদির । তখন থেকেই ওদের আলাপ । দিদির শ্বশুর – শাশুরি একদম ভালো মানুষ নয় । জামাইবাবু বাইরে থাকে । দিদিকে দিয়েই সব কাজ করান । অনুষ্ঠানের ত্রুটি হলেই জোটে লাঞ্ছনা- গঞ্জনা । দুদিন ছাড়াই দিদিকে বাপের বাড়ি পাঠানো হয় কিছু না কিছু চাহিদা নিয়ে ।জামাই ও বছরে একবার কি দুবার বাড়ি আসে । দিদি অনেকবার জামাইবাবুকে বলতে চেয়েছে এইসব কথা কিন্তু তার বিশ্বাস হয়নি । তাই তমসার মা – বাবা কোনভাবেই তাদের অপর মেয়েটিকেও জলে ফেলে দিতে রাজি নন ।
রণি হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে । ব্যাপারটা জানাজানি হবার পর ওর বাবা – মা ওর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন সম্পর্কটা থেকে সরে আসার জন্য । ওনাদের ইচ্ছা এবারে বেশ মোটা দেনা পাওনা সমেত বউ আনবেন । রণিও বেশ upset . সামনের সপ্তায় কলেজ ছুটি পড়বে । তখন মুখোমুখি কথা বলবে বলেছিল ।
রণির সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না তমসা । বুকের ভিতর যেন একটা পাথর চেপে বসে । হঠাৎ তমসার সেলে রণির ফোন আসে । আজ বিকেলে পার্কে একবার আসবি ? তমসা – অঝোরে কেঁদে ফেলে ।কতদিন তোর গলাটা শুনিনি ।আমাকে কষ্ট দিয়ে তুই খুব আনন্দ পাস তাই না? বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে । রণির গলাও ভারী হয়ে আসে । চুপ কর বলছি । তমসা – কষ্ট দেবার সময় মনে থাকে না । আচ্ছা আমার কথাটা শোন pls . বিকেলে আয় না তখন তো কথা হবে । এখন রাখি । কথামতো বিকেলে পার্কে যায় তমসা । সেখানে রণিকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারে না । জড়িয়ে ধরে রণিকে । আমায় ছেড়ে যাসনা pls . রণি – আচ্ছা ঠিকাছে । শোননা আমরা ঐ বেঞ্চটায় বসে কথা বলি ।সবাই দেখছে ।
রণি তমসার হাতদুটো নিজের হাতে চেপে ধরে বলে আমি জানি তুই আমায় খুব ভালোবাসিস । আমিও বাসি । কিন্তু সব সম্পর্ক তো পরিণতি পায় না বল ? আমি চাই না তোর অবস্থাও বৌদির মতো হোক । তুই সারাজীবন কষ্ট পাস । তমসা – তাহলে আমায় নিয়ে পালিয়ে চল । তা হয় না । আমি এখনো stablish নই । কি খাওয়াবো তোকে । তাছাড়া আমারও কিছু দায়িত্ব আছে কর্তব্য আছে । তমসা – আর আমি ? রণি – ভুলে যা আমায় !! তমসা – হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে , কত সহজে বলে দিলি । ঠিক আছে আর কথা বাড়াবো না ।তুই যখন তাই চাস তাই হবে । আমি চলে যাব তোর জীবন থেকে । আর ডাকলেও আমায় পাবিনা কোনোদিন ।চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায় তমসা ।
এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ পাঁচ বছর । বেশ বড়লোক বাড়ির এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে রণির ।রণির একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে । শাশুরির দাবী বংশপ্রদীপ চাই । তাই তারা ইস্যু নিয়েছে । ডাক্তার বলেছেন যমজ সন্তান হবে । রণির মা কিভাবে যেন জানতে পেরেছেন ছোট বউ এর গর্ভে যমজ মেয়ে আছে । তাইএক তান্ত্রিকের থেকে একটা শেকড় এনে বেটে বউকে লুকিয়ে দুধে মিশিয়ে খাইয়েছেন বাচ্ছা নষ্ট করার জন্য । সেটা খাবার পরই বউ এর সারা শরীর বিষিয়ে নীল হয়ে যায় ।হসপিটালে দেওয়া হয় । কিন্তু মা ও সন্তান কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না ।
মেয়ের বাড়ি থেকে থানায় কেস করা হয় । ডিফেন্সের জন্য সবচেয়ে বড় উকিল ঠিক করা হয় । রণির মাকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় । সেখানে বিপক্ষীয় উকিলকে দেখে চমকে যায় রণি ।তমসা , এখনো অবিবাহিত — এত বড় উকিল । রণিকে দেখে ব্যাপারটা আরো ভালো করে বুঝে যায় সে । রণি তমসাকে হাত জোড় করে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু থামিয়ে দিয়ে তমসা বলল সেদিন আমায় ছেড়ে দিয়ে ভালোই করেছিলি নয়তো ঐ মৃত্যু শয্যায় আজ আমি থাকতাম । আমি দেখবো অপরাধী যাতে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি পায় । রণি লক্ষ্য করে এক অন্য তমসাকে , কি তেজ আর দীপ্তি । তমসারা এইভাবেই বাঁচুক আজীবন ।