Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আর একদিন আসিও বন্ধু || Aar Ekdin Asio Bandhu by Jasimuddin

আর একদিন আসিও বন্ধু || Aar Ekdin Asio Bandhu by Jasimuddin

আর একদিন আসিও বন্ধু-আসিও এ বালুচরে,
বাহুতে বাঁধিয়া বিজলীর লতা রাঙা মুখে চাঁদ ভরে।
তটিনী বাজাবে পদ-কিঙ্কিণী, পাখিরা দোলবে ছায়া,
সাদা মেঘ তব সোনার অঙ্গে মাখাবে মোমের মায়া।
আসিও সজনি, এই বালুচলে, আঁকা-বাঁকা পথখানি;
এধারে ওধারে ধান ক্ষেত তারে লয়ে করে টানাটানি।
কখনো সে গেছে ওধারে বাঁকিয়া কখনো এধারে আসি,
এরে ওরে লয়ে জড়াজড়ি করে ছড়ায় ধুলার হাসি।
এহ পথ দিয়ে আসিও সজনি, প্রভাতে ও সন্ধ্যায়,
দিগন্ত জোড়া ধানের ক্ষেতের গন্ধ মাখিয়া গায়।
চরের বাতাস বাতাস করিয়া শীতল করিছে যারে,
সেই পথে তুমি চরণ ফেলিয়া আসিও এ নদী পারে।

আর একদিন আসিও সজনি, এ মোর কামনাখানি,
মুখ বালুচরে আখর এঁকেছি নখরে নখর হানি।
লিখিয়াছি তাহা পাখির পাখায় মোর নিঃশ্বাস ঘায়ে,
আর লিখিয়াছি দুর গগনের কনক মেঘের ছায়ে।
সেই সব তুমি পড়িয়া পড়িয়া অলস অবশ কায়,
এইখানে এসে থামিও বন্ধু মোর বেনুবন-ছায়া।
এই বেনুবন মোর সাথে সাথে কাঁদিয়াছে বহুরাতি,
পাতায় পাতায় জড়াজড়ি করি উতল পবনে মাতি।
এইখানে সখি। সাক্ষ্য হইয়া রাতের প্রহরগুলি,
কত যে কঠোর বেদনা আমার তোমারে বলিবে খুলি।

রাত-জাগা পাখি কহিবে তোমারে, আমার বে-ঘুম রাতি,
কাটিতে কাটিতে কি করে নিবেছে একে একে সব বাতি।
সেইখানে তুমি বসিও সজনি।মনে না রাখিও ডর,
সেদিন আমার যত কথা সখি। এই মুক মাটি তলে,
মোর সাথে সাথে ঘুমায়ে রহিবে মহা-মৃত্যুর কোলে।

এই নদী তটে বরষ বরষ ফুলের মহোৎসবে;
আসিবে যাহারা তাহাদের মাঝে মোর নাম নাহি রবে।
সেদিন কাহারো পড়িবে না মনে, অভাগা গাঁয়ের কবি,
জীবনের কোন কনক বেলায় দেখেছিল কার ছবি।
ফুলের মালায় কে লিখিল তারে গোরের নিমন্ত্রণ,
কে দিল তাহারে ধুপের ধোঁয়ায় নিদারুণ হুতাশণ।

সেদিন কাহারো পড়িবে না মনে কথা এই অভাগার,
জনিবে না কেউ কত বড় আশা জীবনে আছিল তার।
ধরণীর বুকে প্রদীপ রাখি সে, আকাশের ডাক দিত-
মাটির কলসে জল ভরে সে যে তটিনীরে বুকে নিত।
এত বড় আশা কি করে ভাঙিল, কি করে জীবন ভোরে,
রঙ-কুহেলির সোনার স্বপন ভাঙিল সিঁধেল চোরে।
এসব সেদিন স্মরিবে না কেহ, দুঃখ নাহিক তায় ;
যে গেল তাহারে ফিরায়ে আনিতে পিছু-ডাকে নাহি হায়।
যে দুখে আমার জীবন দহিল সে দুখের স্মৃতি রাখি,
সবার মাঝারে রহিব যে বেঁচে, এর চেয়ে নাই ফাঁকি।

তুমিও আমারে ভেবো না সেদিন, আমার দুঃখ ভার।
এতটুকু ব্যথা নাহি আনে যেন কোনদিন মনে কার।
এ মোর জীবনে তোমার হাতের পেয়েছিনু অবহেলা,
এই গৌরব রহিল আমার ভরিতে জীবন ভেলা।
তুমি দিয়াছিলে আমারে আঘাত, তারি মহা-মহিমায়
সবার আঘাত দলিয়া এসেছি এ মোর চরণ ঘায়।
তোমারে আমার লেগেছিল ভাল, আর সব ভাল তাই।
আমার জীবনে এতটুকু দাগ কেহ কভু আঁকে নাই।
তোমার নিকটে পেয়েছিনু ব্যথা তারি গেীরব ভরে,
আর সব ব্যথা খড়কুটা সম ছিঁড়িয়াছি নখে ধরে।

তুমি দিয়েছিলে ক্ষুধা,
অবহেলে তাই ছাড়িয়া এসেছি জগতের যত সুধা।
এ জীবনে মোর এই গৌরব, তোমারে যে পাই নাই,
আর কারো কাছে না পাওয়ার ব্যথা সহিতে হয়নি তাই।
তোমার নিকটে কণিকা না পেয়ে আমি হয়েছিনু ধনী-
আমার কুটীরে ছড়াছড়ি যেত রতন মানিক মণি।

তাই আজ শুভখনে-
মোর পরে তব যত অন্যায় আনিও না কভু মনে।
আমারে যে ব্যথা দিয়েছিলে তুমি, তাতে নাহি মোর দুখ,
তুমি সুখে ছিলে, মোর সাথে রবে সেই স্মরণের সুখ।
আর একদিন আসিও সজনি। মোর কন্ঠের ডাক।
যতদিন তুমি না আসিবে যেন নাহি হয় নির্ব্বাক।
এ মোর কামনা পাখি হয়ে যেন এই বালুচরে ফেরে,
যেন বাজ হয়ে গগনে গগনে মেঘের বসন ছেঁড়ে।
এই কথা আমি ভরে রেখে যাই খর-তটিনীর জলে,
যেন দুই কুল ভাঙিয়া সে চলে আপনার কল্লোলে।
আর একদিন আসিও সজনি। এ আমার অভিশাপ।
যত দিন যাবে পলে পলে এর বাড়িবে ভীষণ তাপ।
এই বাসনার ইন্ধন জ্বালি সাজালেম যেই হোম,
কাল-নটেশের চরণের তালে জ্বলে যেন নির্স্মম।
যেন তারি দাহ সপ্ত আকাশ ভেদিয়া উপরে ধায়,
চন্দ্র-সুর্য মুরছিয়া পড়ে তারি নিশ্বাস ঘায়।
যেন সে বহ্নি শত ফণা মেলি করে বিষ উদগার,
তারি দাহ হতে তুমি যেন কভু নাহি পাও উদ্ধার।
যতদিনে তুমি এই বালুচলে নাহি আস পুন ফিরে,
আজি এই কথা লিখে রেখে যাই বালুকার বুকে চিলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *