Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমি কি বলতে পেরেছিলাম || Ami Ki Bolte Perechilam by Mahadev Saha

আমি কি বলতে পেরেছিলাম || Ami Ki Bolte Perechilam by Mahadev Saha

আমার টেবিলের সামনে দেয়ালে শেখ মুজিবের
একটি ছবি টাঙানো আছে
কোন তেলরঙ কিংবা বিখ্যাত স্কেচ জাতীয় কিছু নয়
এই সাধারণ ছবিখানা ১৭ মার্চ- এ বছর শেখ মুজিবের
জন্ম দিনে একজন মুজিব প্রেমিক আমাকে উপহার দিয়েছিলো
কিন্তু কে জানতো এই ছবিখানা হঠাৎ দেয়াল ব্যপে
একগুচ্ছ পত্র পুষ্পের মতো আমাদের ঘরময়
প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে রাত্রিবেলা
আমি তখন টেবিলের সামনে বসেছিলাম আমার স্ত্রী ও সন্তান
পাশেই নিদ্রামগ্ন
সহসা দেখি আমার ছোট্ট ঘরখানির দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে
দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব;
গায়ে বাংলাদেশের মাটির ছোপ লাগানো পাঞ্জাবি
হাতে সেই অভ্যস্ত পুরনো পাই
চোষে বাংলার জন্য সজল ব্যাকুলতা
এমনকি আকাশকেও আমি কখনো এমন গভীর ও জলভারানত
দেখিনি।
তার পায়ের কাছে বয়ে যাচ্ছে বিশাল বঙ্গোপসাগর
আর তার আলুথালু চুলগুলির দিকে তাকিয়ে
আমার মনে হচ্ছিলো
এই তো বাংলার ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপা দামাল নিসর্গ
চিরকাল তার চুলগুলির মতোই অনিশ্চিত ও কম্পিত
এই বাংলার ভবিষ্যৎ!
তিনি তখনো নীরবে তাকিয়ে আছেন, চোখ দুটি স্থির অবিচল
জানি না কী বলতে চান তিনি,
হঠাৎ সারা দেয়াল ও ঘর একবার কেঁপে উঠতেই দেখি
আমাদের সঙ্কীর্ণ ঘরের ছাদ ভেদ করে তার একখানি হাত
আকাশে দিকে উঠে যাচ্ছে-
যেমন তাকে একবার দেখেছিলাম ৬৯-এর গণআন্দোলনে
তিনি তখন সদ্য ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বেরিয়ে এসেছেন
কিংবা ৭০-এর পল্পনে আর একবার ৭১-এর ৭ই মার্চের
বিশাল জনসভায়;
দেখলাম তিনি ক্রমে উষ্ণ, অধীর ও উত্তেজিত হয়ে উঠছেন
একসময় তার ঠোঁট দুটি ঈষৎ কেঁপে উঠলো
বুঝলাম এক্ষুনি হয়তো গর্জন করে উঠবে বাংলার আকাশ,
আমি ভয়ে লজ্জায় ও সঙ্কোচে নিঃশব্দে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।
আমার মনে হেলা আমি যেন
মুখে হাত দিয়ে অবনত হয়ে আছি
বাংলাদেশের চিরন্তন প্রকুতির কাছে,
একটি টলোমলো শাপলা ও দিঘির কাছে,
শ্রাবণের ভরা নদী কিংবা অফুরন্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের কাছে
কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো অভিযোগ নিঃসরিত হলো না;
তবু আমি সেই নীরবতার ভাষা বুঝতে চেষ্টা করলাম
তখন কী তিনি বলতে চেয়েছিলেন, কী ছিলো তার ব্যাকুল প্রশ্ন
ব্যথিত দুটি চোখে কী জানার আগ্রহ তখন ফুটে উঠেছিলো!
সে তো আর কিছুই নয় এই বাংলাদেশের ব্যগ্র কুশলজিজ্ঞাসা
কেমন আছে আট কোটি বাঙালী আর এই বাংলা বাংলাদেশ!
কী বলবো আমি মাথা নিচু করে ক্রমে মাটির সাথে মিশে
যাচ্ছিলাম-
তবু তাকে বলতে পারিনি বাংরার প্রিয় শেখ মুজিব
তোমার রক্ত নিয়েও বাংলায় চালের দাম কমেনি
তোমার বুকে গুলি চালিয়েও কাপড় সস্তা হয়নি এখানে,
দুধের শিশু এখনো না খেয়ে মরছে কেউ থামাতে পারি না
বলতে পারিনি তাহলে রাসেলের মাথার খুলি মেশিনগানের
গুলিতে উড়ে গেল কেন?
তোমাকে কিভাবে বলবো তোমার নিষ্ঠুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে
প্রথমে জয়বাংলা, তারপরে একে একে ধর্মনিরপেক্ষতা
একুশে ফেব্রুয়ারী ও বাংলাভাষাকে হত্যা করতে উদ্রত
হলো তারা,
এমনকি একটি বাঙালী ও বাংলাভাষাকে হত্যা করতে উদ্যত
হলো তারা,
এমনকি একটি বাঙালী ফুল ও একটি বাঙালী পাখিও রক্ষা পেলো না।
এর বেশি আর কিছুই তুমি জানতে চাওনি বাংলার প্রিয়
সন্তান শেখমুজিব!
কিন্তু আমি তো জানি ১৫ই আগষ্টের সেই ভোরবেলা
প্রথমে এই বাংলার কাক, শালিক ও খঞ্জনাই
আকাশে উড়েছিলো
তার আগে বিমানবাহিনীর একটি বিমানও ওড়েনি,
তোমার সপক্ষে একটি গুলিও বের হয়নি কোনো কামান থেকে
বরং পদ্মা-মেঘনাসহ সেদিন বাংলার প্রকৃতিই একযোগে
কলরোল করে উঠেছিলো।
আমি তো জানি তোমাকে একগুচ্ছ গোলাপ ও স্বণৃচাঁপা
দিয়েই কী অনায়াসে হত্যা করতে পারতো,
তবু তোমার বুকেই গুলির পর গুলি চালালো ওরা
তুমি কি তাই টলতে টলতে টলতে টলতে বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে সিঁড়ির উপর পড়ে গিয়েছিলে?
শেখ মুজিব সেই ছবির ভিতর এতোক্ষণ স্থির তাকিয়ে থেকে
মনে হলো এবার ঘুমিয়ে পড়তে চান
আর কিছুই জানতে চান না তিনি;
তবু শেষবার ঘুমিয়ে পড়ার আগে তাকে আমার বলতে
ইচ্ছে করছিলো
সারা বাংলায় তোমার সমান উচ্চতার আর কোনো
লোক দেখিনি আমি।
তাই আমার কাছে বার্লিনে যখন একজন ভায়োলিন্তবাদক
বাংলাদেশ সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলো আমি
আমার বুক-পকেট থেকে ভাঁজ-করা একখানি দশ
টাকার নোট বের করে শেখ মুজিবের ছবি দেখিয়েছিলাম
বলেছিলাম, দেখো এই বাংলাদেশ;
এর বেশি বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি আর কিছুই জানি না!
আমি কি বলতে পেরেছিলাম, তার শেষবার ঘুমিয়ে পড়ার
আগে আমি কি বলতে পেরেছিলাম?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *