অপ্রত্যাশিত
মা দেখো আজও ওপরের আঙ্কেল দাদুকে মারছে ! ছোট্ট সন্তান দীপুর মুখ থেকে শুনে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে থাকতে পারলো না রিমি। সত্যিই এমন দৃশ্য কাঁহাতক সহ্য করা যায় !শিক্ষিত সন্তান তাবলে কিনা বয়স্ক বাবাকে পেটাবে,খেতে দেবে না! আক্ষেপ ঝরলো তার গলায় ।
“কালই দাঁড়াও ব্যবস্থা করছি” শুভেন্দু বলতেই রিমি বাঁধা দিলো।” না গো আমরা ভাড়াটিয়া,সংযত হও।লোকটা বদমাস বরং চুপ চাপ নতুন ঘর খোঁজো”।
দীপুর পিঠে হাত রেখে ছলছল চোখে রিমি স্বামীকে বললো, জানো তুমি ওনাকে তিন দিন লক করে দীঘা ঘুরতে গেছিল ছেলে বউ।আমি দুবেলা গেটের ফাঁক দিয়ে গরম গরম খাবার পৌঁছে দিতে পেরে খুব মানসিক তৃপ্তি পেয়েছি । মেসোমশাই ভয়ে ক্ষুধায় এমন কাঁদছিলেন,উফ চোখে দেখা যায় না ! আকুতি করে বললেন, “বৌমা,ওরা যেন জানতে না পারে তুমি আমায় খেতে দিয়েছো,জানলেই অত্যাচার করবে!
সব শুনে বুকটা মোচড় দিলো শুভেন্ধুর।তারও মনে যে এমন গভীর ক্ষত।যে বাবা মাকে নিজেরা এত যত্ন শ্রদ্ধা করতো,অন্যের প্ররোচনায় তারা কিনা ছেলে বৌকেই ভুল বুঝে সরিয়ে দিলো।”তোরা বরং বেরিয়ে যা,আমাদের জন্য অনেক করেছিস,কাজের লোক রেখে স্বাধীন ভাবে থাকবো” বাবার এই হুঙ্কার আজও কানে বাজলেই কেঁদে ফেলে শুভেন্দু!মা একা কত বাধা দেবে ! তবু স্বামীর এমন নোংরা মনোভাবের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনিও ছেলে বৌমার সাথে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছেন। বনেদি, বিশাল বড় বাড়ির সন্তান শুভেন্দু ,এই দু কামরার ভাড়া ঘরে মা,স্ত্রী সন্তানের সাথে দিব্যি মানিয়ে নিলেও এ আক্ষেপ যেন দগদগে ঘা।
কাল রিমিদের গৃহপ্রবেশ। মাঝরাতে চিন্তায় ঘুম ভাঙে শুভেন্দুর।কে গোঙাচ্ছে সিঁড়িতে! শুভেন্দু তো দরজা খুলে অবাক, এ যে রক্তাক্ত অবস্থায় ওপরের মেসোমশাই!ভেতরে এনে ড্রেসিং করে লোশন লাগালো পরম যত্নে রিমি ওনাকে।ভোরে নিজেদের নতুন ফ্ল্যাটে রেখে এলো। সন্ধ্যায় স্বামী স্ত্রী করজোড়ে বললো,” মেসোমশাই আপনি পিতৃতুল্য,আমরা পিতৃ স্নেহ থেকে বঞ্চিত, আমৃত্যু আমাদের সাথে থাকুন।